সংক্ষিপ্ত বিবরণ :

যেকোনো বিতর্কিত ঘটনার ক্ষেত্রে এক পক্ষকে সমর্থন করে বিপক্ষকে দুটো কথা শোনানো মানুষের প্রায় একটা স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়ার মধ্যেই পড়ে। কিš‘ সেই সূত্র ধরে যখন দলবদ্ধভাবে কাউকে আক্রমণ করা হয় এবং শালীনতার সীমা পেরিয়ে কোনো ব্যক্তি বা ব্যক্তিদের অপমান, উপহাস, অত্যাচার, নির্যাতন, এমনকি ঘৃণা ছড়িয়ে আক্রমণকারীরা যদি চুড়ান্ত উল্লাস প্রকাশ করে, তবে তাকে সামাজিক ব্যাধি বলেই আখ্যায়িত করা যায়। এ নৃশংসতায় একদিকে যেমন ব্যক্তির সামাজিক সম্মানকে হত্যা করা হয়, অন্যদিকে ব্যক্তির জীবনকেও হত্যা করা হয়। আর তা করে উল্লাসিত হয় অত্যাচারকারীরা। একে তুলনা করা যায় গণহিংসার সঙ্গে, যেখানে অপরাধের আগেই অপরাধী নির্দিষ্ট হয়ে যায়। আজ একজন শ্রমিক, গতকাল এক সংবাদকর্মী, পরশু একজন অভিনেতা, আগামীকাল একজন শিক্ষক- এভাবে প্রতিদিন হিংসার ব্যস্ত শ্মশানে কেউ-না কেউ পুড়েই চলেছেন। আর তা দেখে এক শ্রেণির সমবেত জনতা হাততালি দিচ্ছেন- এটা বড় আনন্দের কথা নয়!

‘আমরা-ওরা’ বিভাজন রেখা ক্রমেই টানা হচ্ছে সবক্ষেত্রে। পোশাক থেকে আহার, কলেজ থেকে সিনেমা হল- ‘আমরা-ওরা’-র কাঁটাতারের বেড়ায় ক্ষতবিক্ষত আজ গোটা দেশ। গোটা দেশ জুড়ে প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার আহবান ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে নানা ছলনায়। সামাজিক-রাজনৈতিক অভিজ্ঞতায় যা একেবারেই নজিরবিহীন। মূলত ‘আমরা-ওরা’-র কোনো বাঁধাধরা ছক নেই। এখানে যারা ‘আমরা’, ওখানে তারাই হয়ে যেতে পারে ‘ওরা’। বাংলাদেশে সংখ্যালঘু বিদ্বেষ এবং হিন্দু নাগরিক ও প্রতিকের ওপর ঘৃণাবর্ষণ ও হিংসাত্মক আক্রমণের ইতিহাস পুরনো হলেও স¤প্রতি এর মাত্রা ও ব্যাপকতা বৃদ্ধি পেয়েছে। একটি মহল ধর্মের জিগির তুলে শ্রমজীবী দরিদ্র মানুষকে দলে টানার চেষ্টা চালাচ্ছে।

যে রাজনীতি বিন্দুমাত্র সৌজন্য দাবি করে না, যে রাজনীতি নানা সমস্যায় জর্জরিত- সেখানে কোণঠাসা নাগরিকদের এর থেকে পরিত্রাণের পথ কোথায়? দেশে নেতাদের দৃষ্টি এতটাই সংকীর্ণ হয়ে গিয়েছে যে, রাষ্ট্রীয় পরিধি সুদূর প্রসারী হতে পারছে না। চারদিকে শুধু গড়ল, অবিশ্বাস আর বিভাজনে ভরে যাচ্ছে। মানুষ যেন ক্রমশ খোলস বদল করে মৌলবাদি চারিত্রিক গুণাবলীতে অভ্যস্ত হয়ে পড়ছে। তাইতো বাতাসে পাই শুধু বিচ্ছিরি রকমের বিভাজনের গন্ধ! ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে সবলভাবে জারি থাকছে না প্রগতিশীল মুক্তচিন্তার রাজনীতির বিভিন্ন চেহারা, কলেবর কিংবা কাজ করার চিহ্নটুকুও। কোথাও যেন কোনো গন্ডি নেই, মুছে গিয়েছে সব শালীনতার সীমা। এভাবেই যেন বদলে গেল চেনা মানুষগুলো, চেনা সমাজটা। কিন্তু এটা একদিন বদলে যাবে, বদলে যাবেই। এ বিশ্বাসেই যেন বাঙালি এখনো জেগে থাকতে পারে এটুকুই শুধু চাওয়া। এই চাওয়াকে বাঁচিয়ে রাখতেই সামান্য প্রচেষ্টার বহিঃপ্রকাশ এ বই।