সংক্ষিপ্ত বিবরণ :
বাঙালি জাতি প্রধানত যে ভূখণ্ডে বসবাস করে, সেই ভূখণ্ডই বাংলাদেশ এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গ। আর এই দু’অঞ্চলে যে জাতি বাস করে, তারাই বাঙালি জাতি। যুগে যুগে নানা মানুষের গোষ্ঠীর সংমিশ্রণে গড়ে উঠেছে এই বাঙালি জাতি। এখানে শুরু থেকেই সম্প্রদায়কে জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল জাতীয়তার পরিচয় বহন করার শর্ত হিসেবে। ভাষার ওপর নির্ভর করে জাতীয়তা নির্ধারিত হতে পারেনি বলেই ভারতবর্ষের এ বাঙালি জাতীয়তার মধ্যে সীমাবদ্ধতা স্থান পেয়েছিল। সেদিন ভাষার ওপর জাতীয়তা নির্ধারণ করা গেলে দেখা যেত, এখানে একটি বা দু’টি জাতি নয়, বহু জাতির বসবাস- যাদের পরিচয়ে ফুটে উঠত বাংলা ভাষার প্রাধান্য। ভাষার বিবেচনায় ১৯৪৭ সালে এ বঙ্গদেশে ১৭টি জাতির কথা বলা হয়েছিল। সেদিন ভাষাকে মুখ্য বিবেচনায় নিতে পারলে ধর্ম অপ্রধান হয়ে পড়ত এবং ভাষাভিত্তিক সব ক’টি জাতি মিলে একটি ভাষাভিত্তিক দেশ গড়ে তুলতে পারত। কিন্তু বাস্তবে ধর্মকে ভিত্তি করেই জাতিনির্ভর একটি দেশে পরিণত হয়েছিল বঙ্গদেশ। এখানে যুগে যুগে মানব গোষ্ঠীর মিশ্রণে গড়ে উঠেছে বাঙালি জাতি।
বাংলাদেশ ভারতবর্ষের একটি পূর্ব প্রান্তিক দেশ। মোগলপূর্ব যুগে ভারতবর্ষ একক কোনো শাসক দ্বারা শাসিত হয়নি- কখনও কেন্দ্রীয়ভাবে, আবার কখনও স্বাধীনভাবে শাসিত হয়েছে। ইংরেজ আমলে প্রথমবারের মতো ভারতবর্ষ একক শাসক দ্বারা শাসিত হতে থাকে। একাধিকবার বাংলাদেশের বিভিন্ন অংশ ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্রদেশের অন্তর্ভূক্ত হয়েছে এবং তা বিভিন্ন রাজন্যবর্গ কর্তৃক শাসিত হয়েছে। ১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষকে দু’ভাগে ভাগ করে দেওয়া হয় এবং স্বাধীন ‘ভারত’ ও ‘পাকিস্তান’ সৃষ্টি হয়। এ বিভাজনে বঙ্গ দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে দু’টি ভিন্ন দেশে পরিণত হয়। এর একটি অংশ পূর্ববঙ্গ বর্তমানের বাংলাদেশ, অপর অংশ ভারতের একটি প্রদেশ পশ্চিমবঙ্গ। প্রাচীন হিন্দুযুগে সমগ্র বঙ্গদেশের (বাংলাদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গ) কোনো একটি নির্দিষ্ট নাম ছিল না। এর ভিন্ন ভিন্ন অঞ্চল ভিন্ন ভিন্ন নামে পরিচিত ছিল। উত্তরবঙ্গে ছিল পুন্ড্রু ও বরেন্দ্র, পশ্চিমবঙ্গে রাঢ় ও তাম্রালী এবং দক্ষিণ ও পূর্ববঙ্গে বঙ্গ, সমতট, হরিকেল ও বঙ্গাল, উত্তর ও পশ্চিমবঙ্গের কিছু অংশ ছিল গৌড় নামে পরিচিত। এরূপ ভাগের আরও আগে পুরো দেশটি গৌড় নামে পরিচিত ছিল। এই সমগ্র দেশের সীমা ও বিস্তৃতি সঠিকভাবে নির্ণয় করার কোনো উপায় নেই। কেননা, সেকালে কোনো দেশের স্থায়ী কোনো সীমানা ছিল না। এর পরের মুসলিম যুগে এই সমুদয় দেশসমূহ (পুন্ড্রু, বঙ্গ, রাঢ়, সমতট, তাম্রলিপি, হরিকেল, বরেন্দ্র এবং বঙ্গাল) একত্রে ‘বাংলা’ অথবা ‘বাঙ্গালা’ নামে পরিচিত হয়। ১৩৫২ সালে সুলতান শামসুদ্দিন ইলিয়াস শাহের আমলে ‘বাঙ্গালা’ দেশ নাম চালু হয়। মোগল সাম্রাজ্যের যুগে ‘বাঙ্গালা’ চট্টগ্রাম হতে গহি পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। তখনই এ দেশের বিকল্প নাম হয় ‘বঙ্গ’। কালক্রমে সে দেশটিই পরিচিত হয় বঙ্গ হিসেবে। বঙ্গের অধিবাসীকে যে বাঙালি নামে অভিহিত করা হয়, তা সেই প্রাচীন বঙ্গাল দেশের স্মৃতি বহন করেই।
বাংলায় বসবাসরত বাঙালির জনপদে শান্তি কখনও স্থায়ী ছিল না। প্রণয় ও দ্রোহে শান্তি অক্ষুন্ন রাখার চেষ্টা হয়েছে সবসময়ই। কিন্তু সেই চেষ্টা আবার ভিন্ন খাতেও প্রবাহিত হয়েছে বারবার। কখনও কখনও বহিরাগত শাসকগোষ্ঠী বাঙালির সুখে থাকার প্রয়াসে বিঘ্ন সৃষ্টি করেছে, বাঙালিকে প্রতিহত করার চেষ্টা করেছে। কখনও বিজয়ী হয়েছে, আবার কখনও পরাজয়ের সাময়িক গ্লানিও তাকে ক্ষত-বিক্ষত করেছে। পরাজয়ের দৃষ্টান্ত আছে পাল সাম্রাজ্যের সময়ে। তুর্কি আক্রমণের সময়ও সেই পরাজয় প্রত্যক্ষ করা যায়। আবার সুলতানি আমলেও বিচ্ছিন্ন ঘটনায় সেই নিষ্ঠুর সত্য প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু চুড়ান্ত পরাজয় ঘটেছে ইংরেজ শাসনামলে। আর সেই পরাজয়ের রেশ টেনে রেখেছিল পরবর্তীতে পাকিস্তানের শাসক গোষ্ঠীও। এসব বাইরের শক্তি বাঙালির শান্তির রূপকে নষ্ট করেছে, কুৎসিতকে উস্কে দিয়েছে এবং বাঙালিকে ঐতিহ্যবিচ্যুত করেছে। বাঙালির শোষণ-বঞ্চনার একটি উল্লেখযোগ্য ক্রান্তিকাল ১৯০ বছর- শুরু ১৭৫৭ সালে এবং শেষ ১৯৪৭ সালে। মাঝখানের এই ১৯০ বছর ছিলই শোষণ আর বঞ্চনায় ভরপুর। ১৭৫৭ সালে যে পরাধীনতার শুরু, তার আগেও যে বাঙালির বাংলা তাদের হাতেই ছিল তেমনটা নয়। তবে বিদেশি শাসকের হাতে থাকলেও বাঙালির শোষণ অপেক্ষাকৃত কম ছিল। ১৯৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধ হয়েছিল; সেই যুদ্ধে বাঙালির অংশগ্রহণ ছিল না- সাধারণ মানুষের কোনো অংশগ্রহণ ছিল না। জনগণের নিকট তা ছিল নিছক ক্ষমতা হস্তান্তরের নতুন একটা ঘটনা মাত্র। মুর্শিদাবাদের নবাবরা স্থানীয় ছিলেন, কিন্তু বাঙালি ছিলেন না- ক্ষমতা নিয়ে নেয় বিদেশি শক্তি। স্থানীয় মানুষ যুদ্ধে জড়িত ছিল না, কিন্তু তাদের ভাগ্য ওই যুদ্ধে স্থির হয়ে গিয়েছিল। ইংরেজ দখল করে নিয়েছিল বাংলাকে। ইংরেজের বাংলা দখলের পর ১৭৭০-৭১ সালে বাংলায় এক মন্বন্তর হয়, যাতে তিন কোটি বাঙালির মধ্যে এক কোটি বাঙালির মৃত্যু ঘটে। আবার সেই ইংরেজরাই যখন ভারতবর্ষ ছেড়ে যায়, তখন ১৯৪৩ সালে ঘটে যাওয়া আর এক মন্বন্তর হয়, যাতে ৩৫ লাখ মানুষ মারা যায়। ১৯৪৭ সালে যা ঘটে গেল, ইংরেজরা তাকে ‘মিলনাত্মক’ বলে প্রচার করতে চাইলেও প্রকৃতপক্ষে তা ছিল ‘বিয়োগান্ত’। ভারত-পাকিস্তানের স্বাধীনতা যে পরিপূর্ণ ছিল না, তা কালক্রমে স্পষ্ট হয়েছে এবং বাঙালিদের আরও একবার স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করতে হয়েছে। ১৯৪৭-এ দেশ ভাগ হলো, কিন্তু লক্ষ লক্ষ মানুষ উদ্বাস্তু হলো, হাজার হাজার মানুষ প্রাণ দিল দাঙ্গায়, সম্ভ্রমহানি হলো শত শত নারীর।
শত শত বছর ধরেই বাংলার সম্পদ লুন্ঠিত হয়েছে, পাচার হয়ে গিয়েছে বিদেশে। সম্পদ গিয়েছে দিল্লিতে, মোগলরা পাঠিয়েছে; সম্পদ গিয়েছে লন্ডনে, ইংরেজরা পাঠিয়েছে। আবার যখন পাকিস্তান হয়েছে, তখনও বাংলা শোষণের হাত থেকে রেহাই পায়নি। সম্পদ গিয়েছে পিন্ডিতে, পাকিস্তানিরা পাঠিয়েছে। ১৯৫৭-তে জনগণ ছিল উদাসীন; রাজনীতি বোঝার জ্ঞান ছিল না অনেকেরই। ১৯৪৭ সালে কিছু মানুষ অংশ নিয়েছে রাজনীতিতে। কিন্তু ১৯৭১-এ সব বাঙালি ঝাঁপিয়ে পড়েছে রাজনীতিতে। নিজেদের অধিকার বুঝে নেওয়ার সংগ্রামে তারা তখন সোচ্চার হয়েছে। কিন্তু বাঙালি যতই সচেতন হওয়ার স্বপ্ন দেখেছে, নিজের অধিকার বুঝে নেওয়ার পথে হেঁটেছে- ততই তাদের পেছন থেকে টেনে রেখেছে অদৃশ্য শক্তি। মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেনি সে কখনও। তার মধ্যে সাম্প্রদায়িক বিরোধকে জাগিয়ে রাখার সব ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাদের সাম্রাজ্যবাদবিরোধী লড়াইটাকে হিন্দু-মুসলমান হানাহানির অন্ধকার গলির ভেতরে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে, সাম্প্রদায়িক বিরোধ বেড়েছে।
১৯০৫ সালে দুই বাংলার বিভাজন করতে চেয়েছিল ইংরেজরা। দুই বাংলাকে ভেঙে এবং এর সঙ্গে দু’পাশের ভৌগোলিক কিছু অংশ যোগ করে দু’টি স্বতন্ত্র প্রদেশ সৃষ্টি করার সেদিনের চেষ্টা শেষ মুহূর্তে সফলতার মুখ দেখেনি। দু’বাংলার মানুষ সেদিন ব্যর্থ করে দিতে পেরেছিল দু’বাংলার বিভাজন। ১৯০৫-এর কর্মকাণ্ড তাই ১৯৪৭-এর আগমন সম্ভাবনা বাড়িয়েই দিয়েছিল। এ কথা সত্যি যে, সাম্প্রদায়িকতা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ওই বৃদ্ধিকে ইংরেজরা উৎসাহিত করেছে। ভারতবর্ষের দু’প্রান্তে দু’টি এলাকা নিয়ে শুধু ধর্মের ভিত্তিতে রাষ্ট্র হয়ে দেখা দিল পাকিস্তানের। দুই পাকিস্তানের মাঝখানে থাকল ভারত। এ কৃত্রিমতা পাকিস্তান সৃষ্টির পথে বড় অবাস্তবতার এবং অবৈজ্ঞানিকতার করুণ সাক্ষী। পাকিস্তানের দু’এলাকার ভেতর প্রত্যক্ষ যোগাযোগের অভাব ছিল। অধিবাসীদের মধ্যে ধর্ম ছাড়া কোনো বিষয়েই কোনো সাদৃশ্য ছিল না। দু’বাংলার মানুষ কে কোথায় থাকবে, কীভাবে থাকবে- সেই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি বিশেষ কোনো বিবেচনায় নেওয়া হয়নি তখন। ফলে অনেক পরিবার দ্বিখণ্ডিত হয়েছে এবং কাছাকাছি বাস করা মানুষগুলো রাতারাতি একে অপরের অচেনা হয়ে গিয়েছে। কারো কারো বসতবাড়ির একাংশ পড়েছে পূর্বাঙ্গে, আর অপর অংশ পশ্চিমবঙ্গে।
ইতিহাস হাঁটে সামনের দিকে, কিন্তু তার পরিচয়ে সবচেয়ে বড় কাজ করে পেছনের দিকটা। সেই পেছনে তাকিয়ে দেখি, ইংরেজ, কংগ্রেস এবং মুসলিম লীগ দেশ ভাগের অনিবার্যতা তৈরি করেছিল নিজ নিজ স্বার্থে। তাদের স্বার্থের এ তৎপরতাই আরও একটি অনিবার্যতা উপহার দিয়েছিল এ দেশবাসীকে। আর তা হলো সাম্প্রদায়িকতা। সারা ভারতবর্ষে ছড়িয়ে পড়েছিল সাম্প্রদায়িক বিরোধ। কিন্তু কংগ্রেস কিংবা মুসলিম লীগ তখন ছিল নিজ নিজ প্রাপ্য বুঝে নেওয়ার দৌড়ে। ইংরেজরা অবলীলায় দেশে সংকট বাড়ানোর পথেই তাদের শেষ চালটা দিয়ে যাচ্ছিল। তাদের ভাবটা ছিল- আমরা তো চলেই যাচ্ছি, এবার তোমরা নিজেদের ভাগ-বাটোয়ারা বুঝে নিতে ঝাঁপিয়ে পড়। সাম্প্রদায়িকতা ঠেকাতে সেদিন যা ছিল সবচেয়ে বড় হাতিয়ার- সেই ঐক্যই ছিল না দু’বাংলার মধ্যে, দু’দেশের মধ্যে, দু’ধর্মের মধ্যে। হানাহানি বাড়তে বাড়তে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার রূপ ভয়াবহ থেকে ভয়াবহ হতে থাকল। বাংলার পথে-প্রান্তরে ছিল তখন চৌদ্দপুরুষের ভিটে ছেড়ে আসার তীব্র হাহাকার। ধান, জমি, গরু, স্বজন সবই তাদের হারাতে হয়েছে। রেলস্টেশনে, ট্রামে-বাসে, ঝুপড়িতে, ক্যাম্পে ছিড়ে যাওয়া এবং উড়ে যাওয়া লক্ষ লক্ষ মানুষ; উদ্বাস্তু জীবনের দহন স্মৃতি। পূর্ব থেকে পশ্চিমে, পশ্চিম থেকে পূর্বে মানুষের ঢল। তারপর শত কষ্টের ইতিহাসের গাঁ ঘেষে এক সময় জন্ম নিল পৃথিবীর একমাত্র বাংলা ভাষার রাষ্ট্র ‘বাংলাদেশ’।
কিন্তু বাংলাদেশ তার স্বমহিমায় এগিয়ে যেতে পারে না; বারবার হোঁচট খায়। হোঁচট খায় চরমভাবে ২০২৪-এ আরেকবার । স্বৈরাচারী রাষ্ট্র ক্ষমতার ধারক হয়ে ওঠেন মুজিব কন্যা শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনাকে সরাতে মাঠে নামে ছাত্র-জনতা। গুলিতে ঝাঁঝরা হতে হয় শত শত তরুণকে, আহত হতে হয় হাজার হাজার নিরস্ত্র অসহায় মানুষকে। কিন্তু তারপরও শেষ রক্ষা করতে পারেননি শেখ হাসিনা, পালিয়ে দেশ ত্যাগ করতে হয় তাকে। শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি থেকে মুক্ত হয় ভিন্নমতের রাজনীতি এবং মানুষ। কিন্তু তারপরও সেই নিশ্চয়তার চাদর সরে গিয়েছে- এমনটা বলার সুযোগ এখনো আসেনি। তরুণরা শক্তিশালী শাসকের চোখে চোখ রেখে ঠিকই কথা বলেছে। কিন্তু সেটাই কি সব অন্যায় ও বৈষম্যের শেষ বাঁশির শব্দ? ইতোমধ্যেই অন্তর্বর্তী সরকার ২০২৪-এর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকা তরুণদের কর্মকাণ্ডকে দায়মুক্তি দিয়েছে। দায়মুক্তি নিয়ে বাংলাদেশের ইতিহাস বেশ পুরনো। ১৯৭১ সালে মুক্তিলাভের পর থেকেই এর জয়যাত্রা শুরু হয়। স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ থেকে ১৯৭২ সালের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধাদের দায়মুক্তি দেওয়া হয়েছিল। এর অর্থ ছিল- এ সময়ের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধাদের দ্বারা সংঘটিত কোনো কাজ অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে না। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় অর্জিত হওয়ার পরও ১৯৭২ সালের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধারা দায়মুক্তির এই স্বাধীনতা উপভোগ করেছিল। ঠিক একই কায়দায় ২০২৪ সালেও সরকার ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া ছাত্র-জনতা ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতন ঘটলেও ৮ আগস্ট পর্যন্ত তাদের সব কর্মকাণ্ডের জন্য তারা দায়মুক্তি পেয়ে যায়।
২০২৪-এর দায়মুক্তি, বৈষম্যপূর্ণ বিচারব্যবস্থা, ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্কের টানাপোড়েন, আয়না ঘরের বীভৎসতা, দুর্নীতি, অন্তর্বর্তী সরকারের সংকট, ছাত্রলীগের নিষিদ্ধকরণ, পুলিশের বাস্তবতা, রিসেট বাটনের ভবিষ্যৎ, স্বৈরশাসনের পরাজয়সহ আরও কিছু রাজনৈতিক এবং সামাজিক বিষয়ের ওপর লেখা বেশ কয়েকটি প্রবন্ধ নিয়ে সাজানো হয়েছে এ বইটি। ২০২৪-এর ছাত্র-গণআন্দোলনের অব্যবহিত আগে ও পরে লেখা প্রবন্ধগুলোই এ বইয়ে স্থান পেয়েছে।