সংক্ষিপ্ত বিবরণ :
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বাংলাদেশের ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে সবচেয়ে বেশি সংখ্যায় সৈন্যের আত্মসমর্পণের ঘটনা ঘটেছিল ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর। ঘৃণা প্রদর্শন নয়, দুঃখ প্রকাশ নয় বরং বীরের মর্যাদা দিয়েই পরবর্তীতে তাদেরকে সাদরে গ্রহণ করেছিল পাকিস্তান। একবার ভুলেও তাদের অমানবিক আর পাশবিক অত্যাচারের ফলে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের নিরীহ মানুষগুলোর কী ক্ষতি হয়েছিল, তা তলিয়ে দেখার কিংবা পুরো বিষয়টি তদন্ত করার কথা তারা ভেবে দেখেনি। বরং উল্টোটাই করেছিল সেদিন পাকিস্তান। এমন একটি রাষ্ট্রের কাছে তাই হাজার হাজার নিরীহ-নিরস্ত্র বাঙালির মৃত্যু, হাজার হাজার বাঙালি রমনীর সম্ভ্রমহানি কোনো প্রভাবই ফেলতে পারেনি সেদিন। তাই সেদিন যারা ছিল হত্যাকারী, মা-বোনের সম্ভ্রম হানিকারী সেই হাজার হাজার পাকিস্তানি সেনাদের তারা গ্রহণ করেছিল সাদরে, বীরের মর্যাদা দিয়ে। আজ অবধি আইএসআই নিয়ন্ত্রিত পাক-শাসক ঠিক সেটাই করে আসছে।
পাকিস্তানের সেনারা বিশেষভাবে সেদিন বেছে বেছে সংখ্যালঘুদের এবং আওয়ামী সমর্থকদের হত্যা করলেও হিসেবের খাতায় যা ছিল তা থেকে বলা যায়, ইসলামের ইতিহাসে আজ পর্যন্ত মুসলমান কর্তৃক এত মুসলমান নিধনের ঘটনা আর একটিও ঘটেনি যেমনটা হয়েছিল ১৯৭১-এ সেদিনের পূর্ব পাকিস্তানে। বাংলাদেশে আজও বিশেষভাবে ১৪ ডিসেম্বর এবং ১৬ ডিসেম্বর পালিত হয়। শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস এবং বিজয় দিবস। একসঙ্গে এত বুদ্ধিজীবী হত্যা পৃথিবীর অন্য কোনো দেশে কখনও ঘটেনি। পাকিস্তান আজও বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবী এবং সাধারণ নিরীহ-নিরস্ত্র মানুষের হত্যার জন্য ক্ষমা চায়নি কিংবা দুঃখ প্রকাশ করেনি। বিশ্ব মানবতা আজও এগিয়ে আসেনি পাকিস্তানকে বাধ্য করতে এমন নারকীয় জেনোসাইডের দায় গ্রহণ করতে। তাই আজও আমাদের দাবি ঠিক সেই জায়গায়ই আছে, যা ছিল ১৯৭১-এ। ‘যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাই’ এ দাবি আমরা করেই যাব পাকিস্তানের প্রতি, বিশ্ব মানবতার প্রতি। কেননা, এ দাবি শুধু দাবির মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। এ দাবিতে আছে বিশ্বের অন্যতম বড় একটি জেনোসাইডের ইতিহাস, বিশ্ব মানবতার গ্লানিময় এক ইতিহাস, পাকিস্তান নামক দেশটির নির্লজ্জভাবে চোখ বন্ধ করে থাকার ইতিহাস। এই অনুভূতিতেই লেখা কয়েকটি প্রবন্ধ নিয়ে সাজানো হয়েছে বইটি।